বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
মিনহাজ দিপু , কয়রা
সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে গোলপাতা আহরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাওয়ালিরা দাবি করছেন, সরকারকে নির্ধারিত রাজস্ব দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বিপুল অঙ্কের ঘুষ দিতে হচ্ছে বন কর্মকর্তাদের।
ঘুষ না দিলে অনুমতি মেলে না বাওয়ালিদের অভিযোগ, প্রতি নৌকায় সরকারকে নির্ধারিত রাজস্ব দিতে হলেও ঘুষ দিতে হচ্ছে তার কয়েকগুণ বেশি। ফলে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত গোলপাতা বহন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা রেঞ্জে ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে গোলপাতা আহরণের মৌসুম। প্রথম দফায় ৮৯টি নৌকাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি নৌকায় সর্বোচ্চ ১৮৬ কুইন্টাল (প্রায় ৫০০ মণ) গোলপাতা বহনের অনুমতি রয়েছে এবং প্রতি কুইন্টালের জন্য রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা।
তবে বাস্তবে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। কয়রা নদী ও শাকবাড়িয়া এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক নৌকায় ৫০০ মণের পরিবর্তে দুই থেকে আড়াই হাজার মণ গোলপাতা বোঝাই করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নৌকার নিচে মূল্যবান সুন্দরী ও পশুর গাছের খণ্ড পাওয়া গেছে, যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বনদস্যু ও বন কর্মকর্তাদের ‘চাঁদা’ কয়রার বাওয়ালি আবদুস সালাম বলেন, ‘৫০০ মণের জন্য সরকারকে দিতে হয় ১২ হাজার টাকা, কিন্তু ঘুষ দিতে হয় আরও ৪০ হাজার টাকার মতো। এত টাকা না দিলে নৌকা ছাড়ে না বন কর্মকর্তারা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বনরক্ষী ও কূপ কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা জানান, এ অর্থ বন বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যেই ভাগ হয়।
তবে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিয়মবহির্ভূত কিছু হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে, কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, বনদস্যু দমনে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং এ পর্যন্ত ২২টি অস্ত্র উদ্ধার ও ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাওয়ালিরা বলছেন, সরকারি নজরদারি জোরদার না হলে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।